এম. হারুন-অর-রশিদ রিংকু, বরগুনা :
বরগুনায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও একজন। আক্রান্ত ওই যুবক জেলার আমতলী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মাজার সড়কের বাসিন্দা। এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে মোট ৩৩ জনে। তাদের মধ্যে ১৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন, ১৬ জন সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন এবং দুই জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ হুমায়ুন শাহিন খান জানিয়েছেন, বরগুনায় নতুনকরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও এক যুবক। এনিয়ে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে মোট ৩৩ জনে। আক্রান্ত ওই যুবক জেলার আমতলী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের মাজার সড়কের বাসিন্দা। গত শনিবার তার নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার রিপোর্ট বরগুনায় এসে পৌঁছায়। রিপোর্টে তাকে করোনা পজিটিভ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি জানান, ওই যুবকের মা গত শুক্রবার করোনায় হয়েছেন। তাদের হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত জেলায় মোট ৭৫৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে ৭০২ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে। বাকীদের ফলাফল পর্যায়ক্রমে পাওয়া যাবে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেছেন, আক্রান্তদের ওই বাড়িটি আগে থেকেই লকডাউন ঘোষনা করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে। তিনি আরও বলেন, বরগুনায় করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
অপরদিকে, বরগুনায় করোনামুক্ত হয়েছেন আরও দুইজন। তারা হলেন, বরগুনা সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি সড়কের মিরন মিয়া (৪৩) এবং বামনা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাসির মোল্লা। তাদের মধ্যে মিরন মিয়া বরগুনা কোভিড হাসপাতালে এবং মোঃ নাসির মোল্লা নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তার পরপর দুটি নমুনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসলে তাদের করোনামুক্ত ঘোষনা করা হয়। এনিয়ে বরগুনায় মোট ১৬ জন রোগী চিকিৎসা শেষে সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন।
এর আগে রবিবার জেলার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান ভূইয়াকে (৫৫) করোনামুক্ত ঘোষনা করে স্বাস্থ্য াবভাগ। এছাড়া, শনিবার দুপুরে জেলার বামনা উপজেলার নাইম কবির (২২) ও জাকির হোসেনকে (৩৮)। শুক্রবার দুপুরে করোনামুক্ত ঘোষনা করে হাসপাতাল ত্যাগের ছাড়পত্র দেয়া হয় জেলার পাথরঘাটা উপজেলার মধ্য কালমেঘা গ্রামের আবু জাফরকে (৩৪)। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওবায়েদুল কবির দুলাল আকনকে করোনামুক্ত ঘোষনা করা হয়। বুধবার দুপুরে বরগুনা সদর উপজেলার খাকবুনিয়া গ্রামের মোঃ খালেক সিকদার (৭৫) এবং মাইঠা গ্রামের মোঃ আলমগীর (৫০), শহরের কেজি স্কুল সড়কের আবুল বাশার (৬৬) এবং বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা এলাকার মমতাজ বেগম (৪৬) চিকিৎসা শেষে করোনামুক্ত হয়েছেন। তাছাড়া, ২৬ এপ্রিল দুপরে বরগুনা সদর উপজেলার খাকবুনিয়া গ্রামের মোঃ রাব্বী (২৬) ও মাইঠা গ্রামের মোঃ আমির হোসেন (১৬) এবং গত ২৪ এপ্রিল বিকেলে একই উপজেলার খাকবুনিয়া গ্রামের মোঃ সেলিম (৬০) এবং ঘটবাড়িয়া গ্রামের মোঃ হিরন খানও (৩৫) সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বরগুনায় গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে কেউ প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আসেনি। এ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৪০৯ জন। তাদের মধ্যে ৪০৫ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন শেষ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন। বাকী চারজন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এছাড়া, বরগুনায় গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে হোম কোয়ারেন্টাইনে এসেছেন ৩২ জন। এ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন এক হাজার ২৩৫ জন। তাদের মধ্যে ৯৬০ জন কোয়ারেন্টাইন শেষ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন। বাকী ২৭৫ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তাছাড়া, দুইজন প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে এবং ১৩ জন হোম আইসোলেশনে আছেন।
উল্লেখ্য, বরগুনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত ৯ এপ্রিল। সেদিন জেলার আমতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জি এম দেলোয়ার হোসেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ১৭ এপ্রিল। সেদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন জেলার বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামের বৃদ্ধ খলিলুর রহমান।