স্বপন কুমার ঢালি: বাজপেয়ীয় জমিদার বাড়ি সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে।জমিদার বাড়িটির সংস্কার করলে দর্শণার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হবে এবং বাড়িটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে বাজপেয়ীর জমিদার বাড়ির অস্তিত্ব। উপজেলার পাড়েরহাট বন্দরে স্থাপিত জমিদার বাড়িটি ব্রিটিশ শাসনামলের ঐতিহ্য বহন করলেও কালের বিবর্তনে জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হওয়ায় তাদের রেখে যাওয়া সকল স্মৃতি এখন ধ্বংসের মুখে। বাড়িটির ঐতিহ্য রক্ষার্থে এর সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় দিন দিন এটির স্থাপত্য নিদর্শন মুছে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর ব্রিটিশ শাসনামলে দক্ষিণাঞ্চলের কঁচা নদীর কোলঘেঁষা পাড়েরহাট বন্দরে গড়ে ওঠে জমিদার শাসনালয়। জমিদার সূর্য প্রসন্ন বাজপেয়ী এ এস্টেটের জমিদার ছিলেন। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর আত্মীয় বলে জানা যায়। তিনি এখানে গড়ে তোলেন কাচারি বাড়ি, নিজের সভাকক্ষ, শয়ন কক্ষ। দুই একর জমির উপর নির্মিত এই প্রাসাদের দেয়াল ইট ও ছাউনী টালি দিয়ে তৈরি।
এ বাড়িটির সামনে দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্ত দিয়ে চলে গেছে একটি রাস্তা। এর সামনে একটি পুকুর রয়েছে। এর পাশেই উত্তর-পূর্ব প্রান্তে পাড়েরহাট পোস্ট অফিস পাড়েরহাট মন্দির। এছাড়া দক্ষিণ প্রান্তে একটি প্রাইমারি স্কুল, রাজলক্ষ্মী স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং পাড়েরহাট নৌ পুলিশ ফাঁড়ি। উত্তর প্রান্তে কিছু বসতি রয়েছে। এর কিছু সামনে পেরুলেই পাড়েরহাট বাজার ছাড়িয়ে খালের উপারে মৎস্য বন্দর। অন্য সব এলাকা থেকে যখন মৎস্য ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন তখন অনেকেই এখানে এসে চোখ বুলিয়ে যান। স্থানীয়দের কাছে জানতে চান এ বাড়িটির অতীত ইতিহাস। অবশ্য এটি যে একটি পুরনো জমিদার বাড়ি ছিল তা কেউ সহসা আঁচ করতে না পারলেও এখানে যে অনেক দিনের আগের একটি পুরনো স্থাপত্য, তা সহজেই বোঝা যাবে।
তবে ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত বিভাজনের পর জমিদাররা এলাকা ত্যাগ করলেও তাদের রেখে যাওয়া শাসনালয় এখনও স্মৃতির নিদর্শন হয়ে পড়ে রয়েছে। জমিদার বাজপেয়ীর উত্তরসূরীরা এ এলাকায় গমন না করায় সংস্কার ও অব্যবস্থাপনার কারণে এ জমিদার বাড়িটি এখন ধ্বংসপ্রায়। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর জমিদার বাড়িটির সংস্কার করলে দর্শণার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হবে এবং বাড়িটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
জমিদার বাড়িটি বর্তমানে সরকারের খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাড়েরহাটের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা পারভীন আক্তার।
পাড়েরহাট ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার বাবুল বলেন, সূর্য প্রসন্ন বাজপেয়ীর এই জমিদার বাড়িটি কালের সাক্ষী হয়ে থাকলেও সংরক্ষণের অভাবে এর অস্তিত্ব এখন বিলীন হবার পথে।